সরিষার তেলের ৬ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা, যা আপনি জানেন না!
Share
সরিষার তেলের ৬ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা, যা আপনি জানেন না !
সরিষার তেল, যা সরিষা গাছের বীজ থেকে উৎপন্ন হয়। ভারতীয় রান্নাঘরে একটি পরিচিত উপাদান।এই তেল রান্নার জন্যে এবং শরীরে মালিশ করার কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার তেলের ঝাঁঝের জন্যে রান্নায় আসে আলাদা স্বাদ । ভারতীয় উপমহাদেশে খ্রিষ্টপূর্ব তিন-হাজার থেকে সর্ষের ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি প্রায়শই ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান সহ বিশ্বের অনেক জায়গায় রান্না এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
এখানে সরিষার তেলের ৬ টি অপরিহার্য উপকারিতা, সেগুলি ব্যবহার করার কিছু সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো-
জীবাণুর বৃদ্ধিকে বাধা দেয়ঃ
সরিষার তেল অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এজেন্ট প্রদাহজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে কাজ করে। এছাড়াও, সরিষার তেলে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে, এটি ডাইক্লোফেনাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যা একটি প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ।
সরিষার তেল সম্পর্কিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি অপ্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়াও, এটি ছত্রাকের প্রভাবকে অনেকাংশে কমাতে সহায়ক। ছত্রাকজনিত কারণে ত্বকের ফুসকুড়ি এবং সংক্রমণের চিকিৎসায় সরিষার তেল সহায়ক।
ত্বক ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করেঃ
খাঁটি সরিষার তেল চুল এবং ত্বকের স্বাস্থ্যকে অপ্টিমাইজ করতে সাহায্য করার জন্য প্রায়শই স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা হয়।
একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ওমেগা -3, ওমেগা -6 ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
শরীরে এই উপাদানগুলোর অভাব বার্ধক্যজনিত সমস্যা, চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই তেলে অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাব রয়েছে, যা খুশকির সমস্যাকে বাড়তে বাধা দেয়। এটি মাথার ত্বকে চুলকানির সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরিষার তেল নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি এবং বিস্তার কমাতে সাহায্য করে। সরিষার তেলে অ্যালিল আইসোথিওসায়ানেট ক্যান্সার-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে কাজ করে।
ইমিউনিটি বুস্টার(রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী) হিসাবে কাজ করেঃ
সরিষার তেলের ঝাঁঝালো উপাদান শ্লেষ্মা এবং অবরুদ্ধ সাইনাস পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। রসুন ও লবঙ্গ দিয়ে সরিষার তেল গরম করে পা এবং বুকে মালিশ করলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ব্যথা উপশমে সাহায্য করেঃ
সরিষার তেলে অ্যালিল আইসোথিওসায়ানেট রয়েছে, যা একটি রাসায়নিক যৌগ যা শরীরের ব্যথা রিসেপ্টরগুলোতে ভালোভাবে কাজ করে এবং ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। সরিষার তেল আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড (ALA) সমৃদ্ধ। এটি এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা প্রদাহ কমাতে এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে।
ব্রেন ফাংশন বুস্ট করতেঃ
সরিষার তেলে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো উপকোষীয় ঝিল্লির গঠন পরিবর্তন করতে সাহায্য করে, যার ফলে ঝিল্লি-বাউন্ড এনজাইমগুলোর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ভিত্তিতে, এটি অনুমান করা যেতে পারে যে সরিষার তেল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতেও সহায়ক।
সরিষার তেলে উপস্থিত পুষ্টিগুণঃ
সরিষার তেলে অনেক প্রয়োজনীয় ও পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান রয়েছে। যা আমাদের ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। এর মধ্যে আছে প্রোটিন, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ওমেগা, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং পরিমাণমতো ভিটামিন-এ । এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন থাকে। যা শরীরকে সুস্থ রাখতে ও নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অবশেষে বলা যায়, সরিষার তেল এদেশের ঐতিহ্য ও গ্রাম-বাংলার মানুষের সাথে বহুকাল ধরেই মিশে আছে। একসময় গ্রামবাংলার একমাত্র ভোজ্যতেল ছিল সরিষার তেল। এর স্বাদ ও গুণাগুণের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় সুপরিচিত এটি। তাই আসুন নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করে রান্নার আসল স্বাদ নেই এবং নিজের শরীরকে সুস্থ রাখি।