চিনাবাদাম ফল না মূল?

চিনাবাদাম ফল না মূল?

চিনাবাদাম ফল না মুল এই নিয়ে দ্বিমত বেশ কিছু যুগ ধরেই চলে আসছে।এই বাদামকে ফল হিসেবে গণ্য করা হলেও কিছু লোকের মতে, বাদাম আসলে একটি মূল। এই বিষয়ে লোকভেদে এখনও মতবিরোধ দেখা যায়। চিনাবাদাম আসলে কি সেটি জানতে হলে আগে আমাদের চিনা বাদামের উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে হবে।

চীনাবাদামের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকো। যা লেগাম গোত্রের একটি প্রজাতি,। এটি হচ্ছে সয়াবিনের পর সবথেকে বেশি স্নেহসমৃদ্ধ ফসল।

চীনাবাদামের ফুল থেকে ফল হয় না। প্রথমে গাছে হলুদ রঙের ফুল আসে। সেই ফুলে পরাগায়ন হবার পর ফুলের পাপড়িগুলো ঝরে গিয়ে ডিম্বাশয়টি ফুলে ওঠে। এই ডিম্বাশয়টি সোজাসুজি মাটির নিচে প্রবেশ করতে থাকে যা মাটির নীচের তাপ ও চাপ শুষে বাদামে পরিণত হয় । তাই বাদামচাষীরা মাটিকে ঝুরঝুরে রাখেন, যাতে বাদাম ফলটি মাটিতে প্রবেশের পথে বাধা না পায়। মাটির নীচ থেকে তোলা হলেও বাদাম আসলে একটি ফল। সেখানেই ফল পরিপুর্ণতা পায়়। ফুল মাটির ওপরে স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে উঠে।

আমরা আসলে ফল ভেবে যা খাই সেটি বীজ। আর যা খোসা টি ফেলে দেই সেটিই হলো ফল। । একটি ফলে ২ থেকে ৪টি বীজ থাকে ।

তবে, কিছু লোকের মতে, বাদাম মাটির নিচে জন্মায় এবং এটি শস্যের মতো দেখেই এটি মুল।বাদাম এর পুষ্টিগুণ নিয়ে কিছু কথা যা না বললেই নয়ঃ

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা:

১. হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকাঃ

গত কয়েক দশকের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায় অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টরল হৃদরোগে আক্রান্তের হার বাড়ায়। তাই এই বিষয়ে সাবধান থাকাটা জরুরি। বাদাম ভালো কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কমে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।

২. ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করেঃ

বাদামে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আরও নানা উপকারে করে থাকে। যেমন, অ্যাক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে কোষেদের ক্ষত রোধ করে, সেই সঙ্গে ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে।

৩.ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ

এতে রয়েছে প্রায় ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম।এক মুঠো বাদাম খেলে শরীরে মাত্র ১৬১ ক্যালরি প্রবেশ করে। ফলে এই খাবারটি খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার কোনও ভয় থাকে না।

৪.মস্তিস্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেঃ

আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা কগনিটিভ পাওয়া, সহজ কথায় মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ভূমিকা পালন করে। তাই গুরুজনেরা নিয়ম করে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।

৫.হজম শক্তি উন্নত করেঃ

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত জলে ভেজানো কাজুবাদাম খেলে শরিরের অভ্যন্তরে বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে হয়।

৬.হাড়ের রোগ প্রতিহত হয়ঃ

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বাদামে উপস্থিত ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু কাজ করে যার ফলে হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত বাদাম খেলে হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

৭.রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখেঃ

বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮.অতিরিক্ত আহারের প্রবণতা কমেঃ

বাদাম খাওয়ার পর ক্ষিদে একেবারে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।

৯.রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রন করেঃ

বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

১০.কোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ

বাদামে উপস্থিত প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষেদের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।


চীনাবাদাম একটি পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে সুপরিচিত। এটি অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন, এবং খনিজ ধারণ করা থাকলেও প্রোটিন এবং শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এটিতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে এবং ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষেদের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। । এই কারণে, বাদাম খাওয়া হোক কাঁচা অথবা ভাজা। এটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য উপকারি
Back to blog

Leave a comment

Please note, comments need to be approved before they are published.