কোলেস্টেরল এর ভয় -আর নয় আর নয়

কোলেস্টেরল এর ভয় -আর নয় আর নয়

ধরুন ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারলেন আপনার শরীরের কোলেস্টেরল এর মাত্রা অতিক্রম করে ফেলেছে , আপনার স্বাস্থ্য অবনতির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। এই শুনে আপনি ঘাবড়ে গেলেন,ভয়ে আপনার শরীর থেকে ঘাম ঝরতে লাগল, হৃদ-স্পন্দন ক্রমশ বাড়তে লাগলো। এমন পরিস্থিতির কথা কখনো ভেবে দেখেছেন কি ?

হয়ত হ্যাঁ অথবা না। ভেবে না থাকলে আর ভাবার প্রয়োজন নেই। আজকের এই ব্লগটি হল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জন্য ।কারণ আমরা বলছি,কোলেস্টেরল থেকেও বাঁচার উপায় রয়েছে। তাই কোলেস্টেরল এর ভয় আর নয়।
কিছু নিয়ম মেনে চললে আর আপনি কি খাচ্ছেন সেই সম্বন্ধে অবগত থাকলেই কোলেস্টেরল এর মাত্রা এবং ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে আগে জানতে হবে কোলেস্টেরল কি এবং কেনো এর পরিমাণের তারতম্য শরীরে প্রভাব ফেলে।


কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি। কিছু খারাপ দিক ছাড়া এর ভালো কিছু দিকও কিন্তু আছে। কোলেস্টেরলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা: লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল (ক্ষতিকর কোলেস্টেরল)- এটি অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অবরুদ্ধ করে রক্তনালির পথ। আরেকটি হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল ) যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল অপসারণে সহায়তা করে।এইচডিএল হল ভালো কোলেস্টেরল এবং বাদ বাকি ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল, এবং টোটাল কোলেস্টরল এগুলো হলো ক্ষতিকর কোলেস্টেরল।এটি শরীরের নার্ভ প্রতিরক্ষা, কোষ এবং হরমোন তৈরি করে।ফলে ধমনীর দেয়ালে এটি জমা হওয়ার সুযোগ পায় না।নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এইচডিএল ৪৫ এমজি/ডিএল-এর উপরে থাকা দরকার। এছাড়া দেখা গিয়েছে ৬০-এর উপরে এই কোলেস্টেরল থাকলে সব থেকে বেশি উপকার মেলে।অপরদিকে এলডিএল কোলেস্টেরল ১০০-এর নিচে থাকা ভালো। প্রথমত, আমাদের খাদ্যাভ্যাসের কারণে,বেশি শুয়ে বসে থাকলে,তারপর কিছু অভ্যাস আছে যেমন ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা সেবন এসব কারণে খারাপ কোলেস্টরল বাড়ে। কিছু রোগ রয়েছে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের ফসল। আবার কিছু ঔষধ আছে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কোলেস্টেরল তৈরি হয় দেহের ভেতরেই যেমন লিভারে বা যকৃতে। আমাদের দেহে রক্তে বিদ্যমান কোলেস্টেরলের ৭৫% ভাগই তৈরি হয় যকৃতে। বাকি ২৫% আসে খাদ্য থেকে।
স্বাভাবিক মান বজায় থাকলে কোলেস্টেরল দেহের জন্য খুব উপকারী কাজ করতে থাকে। যদিও রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে গেলে কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ হয় না। তবে রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকলে ধমনি গাত্রে চর্বি জমে এবং বাধা প্রদান করে রক্তপ্রবাহ। বিশেষ করে করোনারি ধমনি দিয়ে রক্ত চলাচল ক্ষীণ হয়ে যায়। ফলে স্ট্রোক এবং আলঝেইমার্স রোগেরও ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
যদি সঠিক সময়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো না যায় তাহলে তা নানাভাবে প্রাণঘাতী হতে পারে। ফলে এর থেকে সাবধানে থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কোলেস্টেরলের মান কমাতে খাদ্যবিধি একটি উত্তম পন্থা। রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে অনেকে কোলেস্টেরল ফ্রি ফুড খুঁজে থাকে।কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে - কোলেস্টেরল ফ্রি কোনো ফুড নেই। তবে কয়েক ধরনের খাবার গ্রহণ করে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিশেষ করে ফাইবার যুক্ত যেকোনও খাবার কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করে হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।


রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে যা খাবেনঃ
১। হলুদ : হলুদ খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করতে কাজ করে। আসলে, হলুদের ভিতরে থাকা উপাদানগুলি রক্তের ধমনি থেকে কোলেস্টেরল অপসারণ করতে কাজ করে। এর জন্য আপনি হলুদের দুধ পান করতে পারেন। অথবা আপনি সকালে গরম পানির সঙ্গে আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়ো খেতে পারেন।
২।রসুন : কোলেস্টেরল হ্রাস করার একটি দুর্দান্ত খাবার হল রসুন। তবে এর জন্য আপনাকে সকালে বা রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এটি কাঁচা খেতে হবে। আসলে, এতে অ্যালিসন উপস্থিত রয়েছে, যা মোট এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করতে সক্ষম।
৩। আমলকী : আমলকী গুণে-মানে অতুলনীয়। ফলটি শুধু ভিটামিন আর খনিজ উপাদানেই ভরপুর নয়, বিভিন্ন রোগব্যাধি দূর করতেও অসাধারণ গুণ রয়েছে।আমলার ভিতরে আমলা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাওয়া যায় যা কোলেস্টেরল কমাতে কাজ করে। আপনি যদি চান কাঁচা খান, বা এক চামচ গুঁড়ো হালকা গরম জলের সঙ্গে পান করুন। এটি আপনার হার্টের সমস্যা থেকে রক্ষা করবে।
৪।ধনিয়া : আমাদের দেহে এলডিএল নামক এক ধরনের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে, ধনে এই ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। এটি শরীরের জন্য ভালো। এইচডিএলের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে শরীর সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে এই ধনিয়া।
৫।গ্রিনটি : গ্রিনটি (সবুজ চা) এর ভেতরে রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমানোর উপাদান রয়েছে। দিনে মাত্র পাঁচ কাপ সবুজ চা পান করলে ২৫ শতাংশ কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এতে রক্ত পরিষ্কার হয়, দূর হয় রক্তের জমাট বাঁধা।
৬। বাদাম : বাদাম প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম আপনার রক্তে ক্ষতিকর চর্বি বা এলডিএল এর মাত্রা ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া বাদাম খেলে পাবেন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
৭।আপেল সিডার ভিনেগার : আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল-সহ অনেক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। এর জন্য এক চামচ আপেল ভিনেগার নিয়ে এক গ্লাস কুসুম গরম জলে ভালো করে মিশিয়ে পান করুন। এটি আপনার কোলেস্টেরলের সমস্যাও সমাধান করবে এবং আপনি সুস্থ থাকবেন।
৮।সয়াবিন : শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে সয়াবিন,তারই সাথে বৃদ্ধি করতে থাকে ভালো কোলেস্টেরল। মানুষের ধমনীতে কোলেস্টেরলের যে জারণ জমে তাতে বাধা দেয় সয়াবিন।
৯।মধু : খাবারে চিনির পরিবর্তে মধু দারুণ উপকারী। কারণ মধুতে থাকে এমন কিছু উপাদান যা কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়,যা চিনি খেলে বেড়ে যায়।
১০।সবুজ সবজিঃ বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক এবং ফলমূলে রয়েছে অন্ত্রের চর্বি শোষণ কমানোর উপাদান। প্রতিদিন এ ধরনের খাবার আপনার রক্তে এলডিএলের মাত্রা ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে বলে গবেষণায় জানা গেছে।
১১।গোলমরিচ : গোলমরিচ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদানে ভর্তি। এর পাশাপাশি এটি ফ্যাট কোষকেও গলিয়ে দিতে সাহায্য করে। ফলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকে।
১২।মেথি : ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে মেথি দারুণ কাজে লাগে— একথা অনেকেই জানেন। কিন্তু মেথি যে খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে, সে কথা হয়ত অনেকেই জানেন না। এই বীজটি ক্ষুদ্রান্ত এবং লিভারে কোলেস্টেরল শোষণের বাধা দেয়।তাই শরীরে কোলেস্টেরল জমে না।
১৩।চিয়া সিড :চিয়া সিডে রয়েছে উদ্ভিদজাত ওমেগা থ্রি অ্যাসিড ও ফাইবার। এই পুষ্টি উপাদানগুলো রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়।
কোলেস্টেরল এর ভয়-আর নয় আর নয়,কারণ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার পরিহার করে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এর হাত থেকে বাঁচা যায়। এছাড়া অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়,সাথে হৃদরোগের ঝুঁকিও।
কোলেস্টেরল থেকে বাঁচার উপায় জানুন তো জানা গেলো। এবার ভাবুন তো এই খাবার গুলো কোথায় পাবেন? কোথাও যেতে হবে না। প্রাকৃতিক এই পণ্যগুলো পেতে ভিজিট করতে পারেন কৃষিজাতের ওয়েবসাইট  https://www.krishijaat.com/shop 

Back to blog

Leave a comment

Please note, comments need to be approved before they are published.