
রান্নাঘর থেকে সুস্থতা: হলুদের ভূমিকা অন্বেষণ
Share
হলুদ বা হলদি (বৈজ্ঞানিক নামঃ Curcuma longa) হলো হলুদ গাছের শিকড় থেকে প্রাপ্ত এক প্রকারের মসলা ।হলুদ প্রাচীন কাল থেকে রূপচর্চা, রান্না, ব্যথা নিবারণ ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভারতীয় উপমহাদেশের রান্নাঘরে হলুদ একটি জনপ্রিয় নাম।পাশাপাশি রূপচর্চায়ও হলুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রান্না যেমন আমাদের হলুদ ছাড়া চলে না তেমনি ত্বক উজ্জ্বল করতে অনেকে কাঁচা হলুদ গায়ে মাখেন। খালি পেটে কাঁচা হলুদ মধু দিয়ে চিবিয়ে খেলে শরীর ভালো থাকে। এমনকি হার্টের অসুখ কমাতে হলুদের বিকল্প নাই। হলুদের মধ্যে বিস্ময়কর আরোগ্য শক্তি বিদ্যমান। উন্নত আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে শুরু থেকেই বিভিন্ন ত্বক পরিচর্যাকারী ঔষধি তৈরি করতে কিংবা কোন স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করতে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে হলুদে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ রয়েছে। তার সাথে হলুদের গুণাগুন মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে এর মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-আর্সিনোজেনিক উপাদানসমূহ। এগুলি শরীরকে ভেতর থেকে রোগ মুক্ত করে স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
হলুদের ইতিহাস
হলুদ একটি সত্যিকারের প্রাচীন মশলা।হলুদের নামের Genus অংশটি আরবি শব্দ Curcuma থেকে। হলুদের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে যা 2500 বছরেরও বেশি পুরানো। এটি 500 বিবিসি এর প্রথমদিকে ওষুধ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
তবে হলুদ প্রথমে ব্যবহৃত হতো রঞ্জক হিসেবে। রঞ্জক হিসাবে ব্যবহার করা হলে হলুদ সাদা কাপড়গুলিকে একটি উজ্জ্বল কমলা-হলুদ করতে পারে এবং বহু বছর ধরেই পোশাক এবং শাড়ির মতো পোশাক রঙিন করতে ব্যবহৃত হয়।
এটি অতীতে পনির এবং দইয়ের মতো খাবারগুলি রং করার জন্যও ব্যবহৃত হতো। রঞ্জকতার পাশাপাশি হলুদও সংরক্ষণাগার হিসেবে খাবারের সাথে ব্যবহার করা হতো।
হলুদের পুষ্টি উপাদান
আমেরিকার কৃষি বিভাগের একটি গবেষণা মতে, ১ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ায় পাওয়া যায় ২৯ ক্যালরি, ০.৯১ গ্রাম প্রোটিন, ০.৩১ গ্রাম চর্বি, ৬.৩১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২.১ গ্রাম আঁশ ও ০.৩ গ্রাম গ্লুকোজ।এ ছাড়া পাওয়া যায় দৈনিক চাহিদার ২৬ শতাংশ ম্যাংগানিজ, ১৬ শতাংশ আয়রন, ৫ শতাংশ পটাশিয়াম, ৩ শতাংশ ভিটামিন সি এবং সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, কপার ও জিংক।
হলুদের উপকারিতা
-স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধকারী ও অন্ত্রের ক্যান্সার নিরাময়ে সাহায্য করে।
-শিশুদের লিউকেমিয়া ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
-হলুদ শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে,যা আমাদের শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জমতে দেয় না ফলে আমাদের স্লিম রাখতে হলুদ খুব উপকার করে।
-ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
-হলুদ পেট পরিষ্কার ও হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
-নিয়মিত পিরিয়ড নিশ্চিত করতে সাহায্য করে
- হলুদ যখন ফুলকপির সাথে মিলিত হয় তখন এটা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং বিদ্যমান প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- হলুদ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার উপশমে চমৎকার কাজ করে।
-পেটের কৃমি সারাতে সাহায্য করে ।
-গায়ের রঙ উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে ।
- যেকোনো চর্ম রোগের জন্য হলুদ অনেক উপকারী।
- ভ্যাস্কুলার থ্রম্বোসিস আক্রান্ত রোগীর রক্তের ঘনত্বের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।
-সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে।
-নিয়মিত হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
-রক্তে সুগারের ভারসাম্যতা রক্ষা করে।
রান্নাঘরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী হল হলুদ। দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের রান্নায় মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে হলুদ। এটি শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না । পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হলুদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই খাঁটি হলুদ খাবারে সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে শরীরের ইমিউনিটি আরও বাড়িয়ে স্বাস্থ্য ও মনকে রাখি আরও উৎফুল্ল।