পহেলা বৈশাখ কিভাবে কৃষকদের জীবন থেকে ইতিহাসের পাতায় উঠে এলো?

পহেলা বৈশাখ কিভাবে কৃষকদের জীবন থেকে ইতিহাসের পাতায় উঠে এলো?

সময়টা তখন মোগল যুগ। দিল্লির সিংহাসনে তখন বসে আছেন সম্রাট আকবর।
তাঁর সাম্রাজ্য ছিল সুবিশাল পশ্চিম থেকে পূর্ব বাংলার সব জমিদার, কৃষক, ব্যবসায়ী সবাইকে কর দিতে হতো। কিন্তু সমস্যা ছিল একটাই হিজরি ক্যালেন্ডার। কারণ হিজরি বছর চাঁদের হিসাবে চলে, যার দৈর্ঘ্য সৌর বছরের চেয়ে প্রায় ১১ দিন কম। এতে করে প্রতিবছর খাজনা আদায়ের সময় আসতো ফসল ওঠার আগেই, ফলে কৃষকের হাতে নগদ কিছুই থাকতো না। যা মোটেই কৃষিকাজ বা ফসল কাটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না।

ফলে যে সময়ে ফসল ঘরে ওঠে না, তখনই কর আদায় হয়ে যেত। এ নিয়ে কৃষকের মুখ ভার, জমিদারের মুখে রাগ, আর গোটা ব্যবস্থাপনায় গন্ডগোল। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই আকবর তৈরি করতে চাইলেন এমন একটি বর্ষপঞ্জি, যা কৃষির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে।

ডেকে পাঠালেন তাঁর রাজজ্যোতিষী ফতেহউল্লাহ সিরাজীকে। নির্দেশ দিলেন, এমন একটা ক্যালেন্ডার চাই যা সূর্য বছরের উপর ভিত্তি করে চলে, আবার হিন্দু ও ইসলামিক দুই ক্যালেন্ডারের মিল হয়।

রাজজ্যোতিষী ফতেহউল্লাহ সিরাজী হিন্দু সৌর পঞ্জিকা ও ইসলামি হিজরি ক্যালেন্ডারের হিসাব মিশিয়ে একটি ফসলভিত্তিক বছর তৈরি করলেন, যার প্রথম দিন নির্ধারিত হলো চৈত্র মাসের শেষে ও বৈশাখের শুরুতে যখন বাংলায় ধান ঘরে ওঠে, আর কৃষক একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

এই বর্ষপঞ্জিকাই হলো আজকের বাংলা সন, আর তার প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ।

অবশ্য সেই থেকে শুরু হয় কৃষক থেকে ব্যবসায়ী সবার মধ্যাকার হালখাতার অর্থনীতি। 

যখন কৃষকেরা ফসল ঘরে তোলেন, তখন জমিদাররা নতুন করে খাজনার হিসাব নেন। আর ব্যবসায়ীরা তাদের খরিদারদের ডেকে পুরনো বকেয়া বুঝিয়ে নতুন খাতা খোলেন  যেটাই “হালখাতা”। অর্থ্যাৎ বকেয়ার খাতার হালনাগাদ করা। 

আর এই হালখাতা থেকেই আস্তে আস্তে জন্ম নেয় বাঙালির নববর্ষ উৎসব।
এতে যোগ হয় বৈশাখী মেলা, পান্তা-ইলিশ, আলপনা, পায়রা উড়ানো, নতুন জামা-কাপড়—একটা গোটা সাংস্কৃতিক চেতনার আবির্ভাব ঘটে।

পহেলা বৈশাখ মানে হলো নতুন শুরুর প্রতিশ্রুতি, পুরনো কষ্ট ভুলে সামনে এগিয়ে চলা।
এই দিনটি আমাদের কৃষিভিত্তিক শেকড়, বাণিজ্যিক ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয় এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

তাই আমরা যখন "শুভ নববর্ষ" বলি, তখন সেটি শুধু শুভেচ্ছা নয় এটা একধরনের বাঙালির আত্মঘোষণা,
যে আমি বাঙালি, আমার উৎসব আছে, আমার বলার গল্প আছে! 

কৃষিজাতের পক্ষ থেকে সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো। 

Back to blog

Leave a comment

Please note, comments need to be approved before they are published.