রহস্য উন্মোচন: বিভিন্ন প্রকার মধু এবং তার উপকারিতা

রহস্য উন্মোচন: বিভিন্ন প্রকার মধু এবং তার উপকারিতা

মধু হলো ফুলের অমৃত এবং মধু মৌমাছির উপরের অ্যারো-পাচনতন্ত্রের একটি উপজাত, যা মৌমাছির মৌচাকের ভিতরে একটি ডিহাইড্রেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘনীভূত হয়। মধুর একটি খুব জটিল রাসায়নিক গঠন রয়েছে যা বোটানিক্যাল উৎসের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। এটি প্রাচীনকাল থেকে খাদ্য এবং ওষুধ উভয়ই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রায় 5500 বছর আগে থেকে মানুষ মধু ব্যবহার করে আসছে।ঐতিহ্যগত ওষুধে প্রাকৃতিক মধুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছাড়াও, বিগত কয়েক দশক ধরে, এটি বিভিন্ন গবেষণা গোষ্ঠী দ্বারা পরীক্ষাগার এবং ক্লিনিক্যাল গবেষণার বিসষয়বস্তু ছিল এবং এটি আধুনিক ওষুধেও স্থান পেয়েছে। মধু প্রায় 60 প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, কিছু প্রজাতির ছত্রাক এবং ভাইরাসের উপর একটি প্রতিরোধমূলক প্রভাব রয়েছে বলে জানা গেছে। এই পর্যালোচনাটি মানব রোগে প্রাকৃতিক মধুর গঠন, ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে।মধুকে একটি সুষম খাদ্য হিসাবে পর্যালোচনা করা হয় এবং এটি সব বয়সের পুরুষ ও মহিলাদের জন্য সমানভাবে জনপ্রিয়।

মধুর রাসায়নিক উপাদান

মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫-৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪-৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫-৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ শতাংশ এনজাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই।


দেশি মধুর প্রকারভেদ ও উপকারিতা

আমরা অনেকেই ভাবতে পারি মধুর প্রকারভেদ জেনে কী লাভ। কিন্তু যাহারা নিয়মিত মধু ব্যবহার করেন তাদের জন্য মধুর প্রকারভেদ জানা খুব দরকার। এর কারণ বিভিন্ন প্রকার মধুতে বিভিন্ন প্রকার উপকারিতা রয়েছে। তাই খাঁটি মধুর উপকারিতা ও মধুর প্রকারভেদ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো-


লিচু ফুলের মধু

লিচু ফুলের মধু প্রাকৃতিক উৎস থেকে উৎপাদিত হয়। এটি হালকা বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে।লিচু ফুলের মধুতে আছে বহু পুষ্টিগুণ যা শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। যেমন-

- উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে;
- ত্বকের চিকিৎসায়;
- ব্রণ,একজিমা সহ ত্বকের তেল চিটচিটে ভাব এবং ত্বকের রুক্ষতা দূরীকরণে;
- মধু মানবদেহে সেরেটোনিন ও মেলাটোনিন তৈরি করে যা ভালো ঘুম নিশ্চিতে সহায়ক;


কালোজিরা ফুলের মধু

কালোজিরা মধু হলো কালোজিরা ফুলের রস থেকে উৎপাদিত এক ধরনের প্রাকৃতিক মধু। এটাতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক এন্টিব্যাক্টেরিয়াল, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। হাজারো গুণে ভরা এই মধুতে আছে গ্লুকোজ ও ফ্রূকটোজ। অনেক প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানও আছে। যেমন- এনজাইম বা উৎসেচক, খনিজ পদার্থ (যথা পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাংগানিজ) ও প্রোটিন। এই মধুতে আছে অনেক গুণগত উপকারিতা। যথা-

- তাপমাত্রা বৃদ্ধি সহায়ক উপাদান;
- শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়;
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে;
- হার্টকে শক্তিশালী করে;
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও অনিদ্রা দূর করে;
- শারীরিক দুর্বলতা দূর করে;
- পাকস্থলী সুস্থ রাখে।

সরিষা ফুলের মধু

সরিষা ফুলের নির্যাস থেকে মৌমাছি যে মধু আহরণ করে তাকে সরিষা ফুলের মধু বলে।সরিষা ফুলের মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৪, বি-৬, সি, ই, কে, ও ক্যারোটিন। এই মধু একেবারেই কোলেস্টেরলমুক্ত। বিশেষ করে মধু রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি, হার্ট শক্তিশালী, কোষ্ঠকাঠিন্য ও অনিদ্রা দূর করে। শারীরিক দুর্বলতা দূরীকরণসহ পাকস্থলী সুস্থ রাখে।

খলিসা ফুলের মধু

খলিশা ফুলের মধুকে সুন্দরবনের রাজা বলা হয়। স্বাদ, ঘ্রাণ এবং কোয়ালিটির জন্য এটিকে দেশসেরা মধু হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন মধুর স্বর্গরাজ্য। সুন্দরবনের খলিশা গাছের ফুল থেকে যে মধু পাওয়া যায় তাকে খলিশা ফুলের মধু বলে। খলিশা ফুলের মধুর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। নিম্নে কিছু উপকারিতার কথা তুলে ধরা হলো-

- হজমে সহায়তা করে;
- রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে;
- রক্তশূন্যতা দূর করে;
- ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী;
- দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে;
- ত্বকের মসৃণতা বাড়াতে সাহায্য করে;
- ওজন কমাতে সাহায্য করে।

মধুর পুষ্টি উপাদান


মধুতে আছে বহু পুষ্টি উপাদান। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে-

- খাদ্য শক্তি -৩০৪ কিলো ক্যালরি;
- খাদ্য আঁশ -০.২ গ্রাম;
- শর্করা -৮২.৪ গ্রাম;
- চিনি -৮২.১২ গ্রাম;
- ভিটামিন সি -০.৫ মিলিগ্রাম;
- ভিটামিন বি ২-০.০৩৮ মিলিগ্রাম;
- ভিটামিন বি ৩ -০.১২১ মিলিগ্রাম;
- ভিটামিন বি ৫ -০.০৬৮ মিলিগ্রাম;
- ভিটামিন বি ৬ -০.০২৪ মিলিগ্রাম;
- ফোলেট -২ মাইক্রগ্রাম;
- আয়রন -০.৪২ মিলিগ্রাম;
- ক্যালসিয়াম -৬ মিলিগ্রাম;
- ম্যাগনেসিয়াম -২ মিলিগ্রাম;
- পটাশিয়াম -৫২ মিলিগ্রাম;
- ফসফরাস -৪ মিলিগ্রাম;
- সোডিয়াম -৪ মিলিগ্রাম;
- জিংক -০.২২ মিলিগ্রাম;
- পানি -৭.১০ গ্রাম।

মধু খাওয়ার উপযুক্ত সময়

দিনের যেকোনো সময় আপনি ক্লান্ত অনুভব করলে তখনই মধু খেতে পারেন তাহলে শরীরে এনার্জি যোগাবে। তবে মধু খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো খালি পেটে সকালবেলায়। সকালবেলায় খালি পেটে মধু খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে।


মধু মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক অপূর্ব নেয়ামত। স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর গুণ অপরিসীম। সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন তৈরির জন্য নিয়মিত মধু খাই এবং দেহ ও মন ভালো রাখি।
Back to blog

Leave a comment

Please note, comments need to be approved before they are published.