
কাজুবাদাম ও স্বাস্থ্য: একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা
Share
বাদামের জগতে এক রাজকীয় স্থানে রয়েছে পুষ্টিগুণ এবং শারীরিক উপকারিতা সমৃদ্ধ এক বাদাম, আর তা হলো কাজু বাদাম। কাজু বাদাম অত্যন্ত সুস্বাদু একটি বাদাম। যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো cashew nuts। গুণাগুণের দিক থেকে কাজু বাদামের কোনও বিকল্প নেই। এর বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale। এরা সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষ।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। স্বাস্থ্যকর সব খাবারের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এই কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে শরীরের নানা রকম সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তাররা একে “প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট” বলেও আখ্যা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন কেও যদি নিয়ম করে এক মুঠো করে কাজু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করে তাহলে তা শরীরের পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি দূর হয়, সেই সাথে পাওয়া যায় আরও অনেক উপকার একাধিক গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে।
কাজু বাদামের উৎপত্তি
কাজুবাদামের উৎপত্তিস্থল ব্রাজিল সহ মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা,উত্তর পূর্ব ব্রাজিল।বর্তমানে এটি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, কেনিয়া, মোজাম্বিক, তানজানিয়া, মাদাগাস্কার প্রভৃতি দেশে কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়ে থাকে। কিডনি আকৃতির বীজ কাজু বাদাম গন্ধ ও স্বাদে মিষ্টি-জাতীয়।
আকার
পূর্ণবয়স্ক গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতা অর্ধ-ডিম্বাকার, দেখতে কাঁঠালের পাতার মতো।নভেম্বর থেকে জানুয়ারি ফুল ফোটার সময়। এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাজুবাদামের দৈর্ঘ্য ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৫ থেকে ২০ গ্রাম হয়ে থাকে।
কাজু বাদামের পুষ্টিগুণ
USDA National Nutrient Database তথ্যমতে ১ আউন্স (২৮.৩৫ গ্রাম) কাঁচা কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। যথা-
-শক্তি- ১৫৭ ক্যালরি;
-শর্করা-৮.৫৬ গ্রাম;
-চিনি-১.৬৮ গ্রাম;
-আঁশ-০.৯ গ্রাম;
-আমিষ-৫.১৭ গ্রাম;
- চর্বি-১২.৪৩ গ্রাম;
- ক্যালসিয়াম-১০ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম- ১.৮৯ মিলিগ্রাম
-আয়রন- ৮৩ মিলিগ্রাম
-ম্যাগনেসিয়াম-১৮৭ মিলিগ্রাম
-পটাসিয়াম-১৬৮ মিলিগ্রাম
-ফসফরাস-৩ মিলিগ্রাম
-সোডিয়াম-১.৬৪ মিলিগ্রাম।
তাছাড়াও ভিটামিন এ, সি, ই এবং বি সহ কপার, ম্যাংগানিজ, সেলেনিয়াম, এন্টিঅক্সিডেন্ট কাজু বাদামে বিদ্যমান। কাজু বাদামের বেশুমার গুণ। সুস্থ সবল থাকার জন্য খাদ্যতালিকায় কাজু বাদাম যোগ করা জরুরি।
খাবার পদ্ধতি
কাজু বাদাম বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়।তবে কাজুবাদাম সাধারণত ভেজে খাওয়া হয়। পাহাড়ি এলাকায় বাদাম মাটি থেকে তুলে আঁশ বের করা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে বীজের আবরণ তুলে ফেলা হয়।লবন-জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে তারপর ভাজা হয়। এতে লবণাক্ত স্বাদের কাজুবাদাম পাওয়া যায়। আর মিষ্টি স্বাদের কাজুবাদামের জন্য বাদাম ভাজার পর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নেওয়া হয়। বিভিন্ন খাদ্যের স্বাদ বাড়ানোর জন্যও কাজুবাদাম ব্যবহার করা হয়।
কাজু বাদামের উপকারিতা
অসাধারণ স্বাদের পাশাপাশি কাজু বাদামে আছে দারুণ কিছু উপকারিতা। যা হলো-
-রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে;
-হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমায়;
-রক্ত স্বল্পতা কমায়;
-ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে;
-অ্যানিমিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমায়;
-হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে;
-হৃদ্রোগ এবং খারাপ কোলেস্টোরেল কমায়;
-হাড় শক্ত করে;
-ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী;
-চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে;
-ব্রেনের শক্তি বাড়ায়;
-চুলের এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে;
-পিওথলির পাথর প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে;
-কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে;
-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
অবশেষ বলা যায়,সুন্দর স্বাস্থ্যের জন্য কাজু বাদাম খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় নিউট্রিশনে ভরপুর কাজু বাদাম আজ থেকেই যোগ করুন।